Gahri Gaon
ছবি: আর্যপ্রতিম সরখেল ও ইন্টারনেট

গহরী গাঁও: দ্য গ্ল্যাম্পিং হেভেন

শ্বেতা সরখেল

বিজনবাড়ি বললে কেউই আশ্চর্য হবেন না জানি। আমিও যখন প্রথম গেলাম, যেখানে যাচ্ছি তা নিয়ে কোনও কৌতূহল তৈরি হয়নি। কারণ সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক দেখেছি।

দার্জিলিং-এর দিকে উঠছি। পাশ কাটিয়ে অন্য রাস্তায় যেতে হবে আমাদের। এলাম পুল বাজার। পুল বাজার থেকে এবার প্রায় পনের কিলোমিটার যেতে হবে সরু রাস্তা ধরে। মুখোমুখি গাড়ি এসে গেলেই সমস্যা। আমাদের সঙ্গে ‘থার’ গাড়ি আছে শুনে রিসর্টের এক ভদ্রলোক বলেছিলেন, “আপনার গাড়ি চলে আসবে, কিন্তু ছোট গাড়ি হলে উঠবে না।”

যাইহোক, উনি আমাদের পুল বাজার থেকে গন্তব্য ‘গহরী গাঁও’ নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিয়ে সামনে সামনে বোলেরো চালিয়ে পথ দেখাতে লাগলেন।

চলতে চলতে মোটামুটি মাঝামাঝি চলে এসেছি, দেখলাম বোলেরো দাঁড়িয়ে গেল এবং ভদ্রলোক গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে হাত দেখিয়ে ইশারা করছেন এটা বোঝানোর জন্য যে সামনে খুব সাবধানে এগোতে হবে। আমরা দাঁড়িয়ে পড়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিলাম। সর্বনাশ! যা দেখলাম তাতে আমাদের পিলে চমকে উঠল। রাস্তা ভেঙে গেছে বলে গাছের গুঁড়ি ফেলে সরু একটা সাঁকো মত বানানো রয়েছে যার ওপর দিয়ে গাড়ি চালালে গাড়ির চাকা দুটোই ওই গুঁড়ি দুটোর ওপর দিয়ে যাবে। এক সেন্টিমিটারের এদিক ওদিক হলে হয় ডান দিকের পাহাড়ে ধাক্কা খাবে, নয় বাঁ দিকে খাদে পড়বে। আমাদের ড্রাইভার যিনি তিনি একান্তই আমাদের প্রিয় এবং নিজের মানুষ, তাঁর পাহাড়ে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা কম নয়, কিন্তু এবারে পরিবার সঙ্গে আছে দু’টি সন্তানসহ ফলে বুকে একটু হলেও ধুকপুকুনি হচ্ছিল বটে তবু আমাদের নিশ্চিন্ত করে বললেন, “বাঁ দিকের চাকা দেখে একটু ন্যাভিগেট কর।” সামনে ভদ্রলোক একটু ডান দিক, একটু বাঁ দিক এভাবে নির্দেশ দিতে লাগলেন। টুকটুক করে সুন্দরভাবে পেরিয়ে গেলাম সাঁকো। পেরিয়ে গিয়েই উত্তেজনায় দুম করে একটা জোরসে চুমু খেয়ে দিলাম আমার ড্রাইভার কর্তার গালে।

পৌঁছলাম ‘ধরতি দ্য গ্ল্যাম্পিং হেভেন’ রিসর্টে। পৌঁছে দেখলাম বিরাট গেট। ঢুকেই মনটা হালকা হয়ে গেল এমন, যেন সমস্ত ভার থেকে মুক্ত হয়ে হাওয়ায় ভেসে গেল। এগিয়ে এলেন মালিক ভদ্রমহিলা প্রেক্ষা শর্মা। হাসিমুখে সম্ভাষণ সেরে আমাদের তাঁবু দেখিয়ে দিলেন যার ভেতরে আমরা দু’দিন থাকব। বেশ লম্বা চওড়া ত্রিপল জাতীয় কাপড়ের টেন্ট। ভেতরে চারটে বিছানা। আমরা চারজন বলেই এই ব্যবস্থা। আমরা স্বামী-স্ত্রী আর আমাদের দুই ছেলে মেয়ে।

সীমানা ঘেরা পুরো রিসর্ট এলাকাটাই পাহাড়ের গায়ে খাঁজ কেটে ধাপে ধাপে নেমে গেছে নিচে। সবশেষে খাদের কাছে গায়ে গায়ে লাগানো দু’টি স্যুইমিং পুল। একটি ছোটদের জন্য আর একটি বড়দের।

পৌঁছে একটু বিশ্রাম করতে করতেই দুপুরের খাওয়ার ডাক পড়ল। আমরা হেঁটে বেশ খানিকটা দূরে ডাইনিং-এ যেতে যেতে দেখলাম প্রচুর বড় বড় গাছ রিসর্টের ভেতরে অনেকটা জায়গা দখল করে আছে। আর যে পথ দিয়ে হেঁটে যেতে হল সেখানে দারুণ সুন্দর ফুলের বাগান সাজানো। কত রকমারি যে ফুল!

গহরী গাঁও পক্ষীপ্রেমীদের জন্য স্বর্গোদ্যান। নানান রকম পাখি গাছে গাছে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গ্রে ট্রিপাই, হোয়াইট ক্রেস্টেড লাফিং থ্রাশ, লেসার নেকলেসড লাফিং থ্রাশ, গ্রেট বারবেট তাছাড়া ব্ল্যাক বুলবুল তো আছেই। বাপ-বেটা মিলে ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে, আর আমরা মায়ে ঝিয়ে বাইনোকুলার গলায় ঝুলিয়ে পরেরদিনটা চষে বেড়ালাম এদিক ওদিক। কোথা দিয়ে যে সময় বয়ে গেল টেরই পেলাম না!

বিকেলবেলা স্যুইমিং পুলটা খুব টানতে লাগল। ঝপাং ঝপাং করে একে একে নেমে পড়লাম সবাই। আমি তো হাঁপিয়ে টাপিয়ে উঠে পড়লাম চট জলদি, আর ওরা তিনজনে রয়ে গেল ঘন্টা দুয়েক ধরে।

মজার কথা হল এই যে, তারপরদিন আমাদের ফিরে আসার কথা, কিন্তু আমাদের ভেতরকার উদ্দীপনা তখন তুঙ্গে। ফিরতে হবে ভাবলেই মনটা দুমড়ে মুচড়ে উঠছে। দুম করে সিদ্ধান্ত নিলাম, আজ ফিরব না। টাকাকড়ির হিসেব করে নিয়ে থেকে গেলাম সেদিন।

ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ল গোটা সকাল জুড়ে। তারপর ঝমঝম করে। পাহাড় ঢেকে মেঘ জমেছে, মৃদু-মন্দ বাতাস। বারান্দায় বসে বসে দু’ভাইবোনের জলকেলি দেখছিলাম আমরা বাবা-মায়ে মিলে। সন্ধে লাগো লাগো হতেই তাঁবুর ভেতরে ঢুকে একটা ব্র্যান্ডি খোলা হল। চলে এল পকৌড়া।

পরদিন রওনা হওয়ার সময় আর পেছন ফিরে তাকানোর মত মনের জোর রইল না। বন্যেরা বনে সুন্দর হয়েই থাকুক, আমাদের ফিরতে হবে ইঁটের পাঁজাতেই। ফলে শেষ বিদায়ের বিষাদ বুকে নিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ালাম আমরা।

 

আপনারাও যেতে চাইলে যোগাযোগ প্রেক্ষা শর্মাঃ ৯৮০০৫৮৯৯০৬

ছবি: আর্যপ্রতিম সরখেল ও ইন্টারনেট

সাম্প্রতিক সংযোজিত প্রতিবেদন

দ্রষ্টব্যঃ এই ওয়েব ম্যাগাজিনে কিছু ছবি ইন্টারনেট থেকে ব্যবহৃত হতে পারে। তাদের দিকে আমাদের আত্মিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই ম্যাগাজিনে তথ্য এবং মন্তব্যসমূহ লেখক/লেখিকাদের দ্বারা প্রদান করা হয়েছে, প্রকাশক/সম্পাদক কোনো বার্তা, মন্তব্য, ভুল অথবা বিষয় অসম্পূর্ণতা সম্পর্কে কোনও দায়বদ্ধতা গ্রহণ করেন না।
কপিরাইট © ২০২৫.
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত: রংরুট.কম
ডিজাইন ও ডেভেলপ করেছে: উইকিইন্ড
রক্ষণাবেক্ষণ: টিম রংরুট